Wednesday, March 20, 2019

thumbnail

অঞ্জনার নাম তো সবাই শুনেছেন। কিন্তু জানেন কে সেই মনির খানের অঞ্জনা? এখন সে কোথায় থাকে?

মনির খানের অঞ্জনা "বিনোদন জগৎ - Entertainment World", 
অঞ্জনার নাম তো সবাই শুনেছেন। কিন্তু জানেন কে সেই মনির খানের অঞ্জনা? এখন সে কোথায় থাকে?

মনির খানের বাল্যকাল কেটেছে নিজ গ্রামেই। বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা, ছোটাছুটি, পুকুরে সাঁতারকাটা আর মাছ ধরা ইত্যাদি এক আনন্দঘন পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন মনির খান। এত কিছুর মধ্যেও ছোট বেলা থেকেই তার গানের প্রতি একটা সহজাত আকর্ষণ ছিল। এলাকার অনেক ওস্তাদের কাছে গান শিখেছেন। তবে সঙ্গীতের হাতেখড়ি হয় মূলত ওস্তাদ রেজা খসরুর কাছে। পরবর্তীতে স্বপন চক্রবর্তী, ইউনুস আলী মোল্লা, খন্দকার এনায়েত হোসেনসহ আরও কয়েকজন ওস্তাদের কাছে তিনি গানের তালিম নিয়েছেন। বাগেরহাট জেলার বাসিন্দা খন্দকার এনায়েত হোসেন ১৯৮৮ সাল থেকে কালিগঞ্জ গুঞ্জন শিল্পীগোষ্ঠি একাডেমীতে ১৫ দিন পর পর এসে গান শেখাতেন।

সঙ্গীতের ভিত্তি গড়ে উঠেছে মূলত ওস্তাদ খন্দকার এনায়েত হোসেনের কাছেই। ১৯৮৯ সালে মনির খান খুলনা রেডিওতে অডিশন দিয়ে আধুনিক গানের শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৯১ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত তিনি এখানে একজন নিয়মিত শিল্পী হিসেবে গান করেন। ১৯৯১ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর এখান থেকে এন. ও. সি নিয়ে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকা শহরে মনির খানকে আশ্রয় দেয়ার মত কোন আত্মীয় স্বজন ছিল না। তাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন নিজ গ্রামের চাচাতো ভাই সম্পর্কে নূরুজ্জামান খোকন। তিনি মনিরকে ঢাকায় পাঠানোর জন্য তার বাবাকে অনুরোধ করেছিলেন।

মনির খান ঢাকাতে আসার পর তার প্রতিবেশী খোকন ভাই মনিরকে বড় ভাই ও পিতার মত করে আগলে রেখেছিলেন দীর্ঘদিন। ঢাকাতে আসার পরও তিনি বেশ কিছু ওস্তাদের কাছে গান শিখেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন আবুবক্কার সিদ্দিক, মঙ্গল চন্দ্র বিশ্বাস, সালাউদ্দীন আহমেদ, অনুপ চক্রবর্তীসহ আরও অনেকে। তিনি যখন যার মধ্যে ভাল কিছু পেয়েছেন সেগুলি নিজের আয়ত্বে নেয়ার চেষ্টা করেছেন।

এইভাবে বেশ কিছুদিন যাবার পর তিনি অডিও মার্কেটে একটি স্থান নেবার কথা ভাবলেন। চিন্তা অনুযায়ী কাজ শুরু করলেন। গান সংগ্রহ করতে দেশের অনেক বড় বড় গীতিকারদের কাছে যেতে শুরু করলেন। এদের মধ্যে রয়েছেন কুটি মনসুর, আব্দুল হাই আল হাদী, লিয়াকত আলী বিশ্বাস, মিল্টন খন্দকার, মোঃ রফিকউজ্জামান, গাজী মাজহারুল আনোয়ারসহ আরও অনেকে। বয়স অল্প থাকাতে এত বড় বড় গীতিকারদের সান্নিধ্যে পাবার মত সাহস তার ছিল না। একদিন সাহস করেই তিনি কুটি মনসুরের কাছে গেলেন। কুটি মনসুর মনির খানের সাথে স্নেহসূলভ আচরণ করলেন।



তিনি মনিরের গান শুনে তাকে দারুণভাবে উৎসাহিত করলেন। মূলত কুটি মনসুরের উৎসাহে উৎসাহিত হয়ে মনির খান বাজারে নিজের গাওয়া গানের ক্যাসেট বের করার সিদ্ধান্ত নিলেন। জনপ্রিয় গীতিকার মিল্টন খন্দকারের সান্নিধ্য পাবার চেষ্টা করলেন। অডিও মার্কেটে তখন মিল্টন খন্দকারের গানের চাহিদা ছিল ব্যাপক। দীর্ঘদিন চেষ্টার পর তিনি মিল্টন খন্দকারের সাক্ষাৎ পেলেন। মিল্টন খন্দকার মনিরকে তার বাসায় নিয়ে গেলেন এবং মনিরের গান শুনে খুশী হয়ে তার কণ্ঠে গাওয়া গানের একটি ক্যসেট বের করতে রাজি হলেন।

ক্যাসেট বের করতে স্কুল শিক্ষক বাবার কাছ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু মিল্টন খন্দকার পুরো টাকাটা তার বাবাকে ফেরৎ দিতে বললেন। মনিরের ক্যাসেট বের করার সমস্ত দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিলেন। ক্যাসেট বের করার উদ্দেশ্যে মনির আরও ভাল ভাবে গান চর্চার মাধ্যদিয়ে নিজেকে একজন পরিপূর্ণ শিল্পী হিসেবে তৈরী করতে চেষ্টা করলেন।

নিজেকে প্রস্তুত করতে মনিরের সময় লেগেছিল ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত দীর্ঘ চার বছর। ১৯৯৬ সালে তার প্রথম ক্যসেট বের হয় ‘তোমার কোন দোষ নেই’ শিরোনামে। ক্যাসেটটি দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। ক্যাসেটটি জনপ্রিয়তা পাবার পর মনির খান রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলেন। এরপর মনির আর থেমে থাকেননি। পরবর্তীতে তিনি একের পর এক বেশ কয়েকটি ক্যাসেট বের করেছেন।

এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘তোমার কোন দোষ নেই’, ‘সুখে থাকা হলো না আমার’, ‘জোর করে ভালবাসা হয় না’, ‘অনেক স্বপ্ন ছিলো তোমাকে নিয়ে’, ‘আবার কেন পিছু ডাকো’, ‘কত সুখে আছি আমি’, ‘কেন তুমি এতটা পাষান’, ‘সে তো আর ফিরে এলো না’, ‘এ কূল আর ও কূল হারালাম দু’কূল’ ইত্যাদি। ২০০৪ সাল পর্যন্ত তার মোট একক ক্যাসেটের সংখ্যা প্রায় ২০টি। প্রায় ৭০টির মত মিশ্র ও ডুয়েট ক্যসেটে তার গান রয়েছে। মনির খানের মোট গানের সংখ্যা সহশ্রাধিক। প্রায় প্রতিটি ক্যসেটেই তিনি সফলতা পেয়েছেন। উল্লেখ্য যে, মনির খানের উত্থানের পেছনে ‘তোমার কোন দোষ নেই’ ক্যাসেটটির যে জনপ্রিয়তা তার একক কৃতিত্বের দাবিদার মিল্টন খন্দকার।

Subscribe by Email

Follow Updates Articles from This Blog via Email

No Comments

About